লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক: তালবিয়া পাঠের সময়, নিয়ম ও গুরুত্ব
তালবিয়া কী?
তালবিয়া হচ্ছে হজ ও ওমরাহ পালনের এক অনন্য ধ্বনি, একান্তভাবে আল্লাহর দরবারে আত্মসমর্পণের স্লোগান। হাজিরা যখন ‘লাব্বাইক’ বলে ধ্বনি তোলেন, তখন তারা জানিয়ে দেন যে, তারা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে এসেছে।
আরবি পাঠ:
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لَا شَرِيكَ لَكَ
বাংলা অনুবাদ:
আমি আপনার ডাকে সাড়া দিলাম, হে আল্লাহ! আমি সাড়া দিলাম। আপনি একক, আপনার কোনো শরিক নেই। সকল প্রশংসা, নেয়ামত এবং সার্বভৌমত্ব আপনারই। আপনার কোনো শরিক নেই।
(সহিহ বুখারি: ১৫৪৯, সহিহ মুসলিম: ২৮১১)
তালবিয়া কখন পড়বেন?
ওমরাহর সময়:
-
ইহরাম বাঁধার পর থেকে শুরু করে কাবা শরিফে তাওয়াফ শুরু করার আগ পর্যন্ত।
-
তাওয়াফ শুরু করার সময় তালবিয়া বন্ধ করতে হয়।
হজের সময়:
-
হজের ইহরাম বাঁধার সময় থেকে শুরু করে ১০ জিলহজ জামরাতুল আকাবা’য় কঙ্কর নিক্ষেপের আগ পর্যন্ত তালবিয়া পড়া সুন্নত।
-
রাসুলুল্লাহ (সা.) ১০ তারিখে কঙ্কর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করতেন।
(সহিহ বুখারি: ১৫৪৪)
কীভাবে তালবিয়া পাঠ করবেন?
পুরুষদের জন্য:
-
তালবিয়া জোরে পড়ে নিজের কণ্ঠ উঁচু করা সুন্নত।
-
রাসুল (সা.) বলেছেন:
"জিবরাইল (আ.) এসে আমাকে বললেন, আমি যেন আমার সাথীদের কণ্ঠ উঁচু করে তালবিয়া পড়তে বলি।"
(আবু দাউদ: ১৮১৪)
নারীদের জন্য:
-
উচ্চ স্বরে নয়, বরং নিজের কান পর্যন্ত পৌঁছায় এমন স্বরে পড়বে।
-
অন্যদের শুনিয়ে তালবিয়া পাঠ করা নারীদের জন্য জায়েয নয়।
(মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ১৪৮৮২) https://www.profitableratecpm.com/jwiigxt9di?key=e6b399d558992f12dcf68d25b5f7e584
তালবিয়া পাঠের নিয়ম-কানুন:
-
পুরো তালবিয়া পাঠ করতে হবে। কোনো অংশ বাদ দেওয়া মাকরুহ।
(আদ্দুররুল মুখতার: ২/৪৮৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/১২৩) -
এটি শুধু মুখের কথা নয়, বরং হৃদয় থেকে আল্লাহর দিকে আত্মসমর্পণের প্রতীক।
তালবিয়া পাঠের ফজিলত ও তাৎপর্য
১. হজ ও ওমরাহর স্লোগান
তালবিয়ার মাধ্যমে একজন মুসলিম ঘোষণা দেয়—সে এখন আল্লাহর অতিথি। এটি হজ ও ওমরার প্রবেশদ্বার।
২. আল্লাহর সৃষ্টি তালবিয়ায় সঙ্গী হয়
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"যখন কোনো মুসলমান তালবিয়া পড়ে, তখন তার ডান ও বামে যত পাথর, গাছ, মাটি আছে সবই তার সঙ্গে তালবিয়া পড়ে। এমনকি পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত সমস্ত সৃষ্টি এতে সাড়া দেয়।"
(তিরমিজি: ৮২৮)
৩. আত্মার জাগরণ
তালবিয়া পাঠের সময় হৃদয়ে আল্লাহর ভালোবাসা, ভয় ও একত্ববাদের দৃঢ় অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এতে একজন মুসলিম নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে সক্ষম হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা:
-
তালবিয়া শুধু ভাষার কথা নয়, বরং তা আত্মিক আত্মসমর্পণ।
-
এটি ঈমানের বহিঃপ্রকাশ, আল্লাহর প্রতি একান্ত ভালোবাসা ও আনুগত্যের নিদর্শন।
-
যারা হজ বা ওমরাহ করতে যাচ্ছেন, তারা যেন তালবিয়ার অর্থ হৃদয়ে ধারণ করে উচ্চারণ করেন।
শেষ কথাঃ
তালবিয়া শুধু একটি বাক্য নয়—এটি আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়ার ঘোষণা, আল্লাহর সঙ্গে এক সম্পর্কের স্মারক। আসুন, আমরা যারা হজ বা ওমরাহতে যাচ্ছি কিংবা মনপ্রাণে যেতে চাচ্ছি, তারা এই তালবিয়া পাঠের গুরুত্ব হৃদয়ে ধারণ করি। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে হজ ও ওমরার তাওফিক দান করেন।
আমিন।
/strong>
আপনার জন্য প্রস্তাবিত আর্টিকেল:
-
হজ ও ওমরাহর প্রস্তুতি: ইসলামী ও বাস্তবিক নির্দেশনা
-
ইহরামের বিধান ও গুরুত্ব
-
হজের পেছনের আত্মিক শিক্ষা
Post a Comment