কোরআন বোঝার জন্য সিরাতুন্নবী চর্চা অনিবার্য

 

সিরাত

কোরআন বোঝার জন্য সিরাতুন্নবী চর্চা অনিবার্য

কোরআন বোঝার জন্য সিরাতুন্নবী চর্চা অনিবার্য
প্রতীকী ছবি

মানবসভ্যতার ইতিহাসে কোরআনুল কারীম এমন এক মহাগ্রন্থ, যার প্রতিটি আয়াত, প্রতিটি শব্দে লুকিয়ে আছে সৃষ্টিজগতের রহস্য, জীবন-দর্শনের পূর্ণতা এবং আখিরাতের মুক্তির অঙ্গীকার। কোরআন শুধু আইন-কানুনের পুস্তক নয়; এটি জীবনঘনিষ্ঠ, হৃদয়স্পর্শী এবং এক জীবন্ত বাস্তবতার দলিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো— আমরা কিভাবে এ কোরআনকে বুঝব? কেবল আরবি ব্যাকরণ, কেবল আক্ষরিক অনুবাদ কি এর গভীরতা উন্মোচন করতে সক্ষম?

না, বরং কোরআনকে বোঝার জন্য প্রয়োজন একটি জীবন্ত মডেল, একটি বাস্তব অনুবাদ, যিনি কোরআনের প্রতিটি শব্দকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করেছেন। সেই জীবন্ত কোরআনই হলেন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

তাঁর জীবন, তাঁর সংগ্রাম, তাঁর সিরাত— কোরআনের এক উজ্জ্বল ব্যাখ্যা। 

তাই বলা চলে, সিরাত হলো কোরআন বোঝার অনিবার্য সূত্র। কোরআন ও সিরাতের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক কোরআন আল্লাহর কালাম, আর সিরাত হলো সেই কালামের বাস্তব রূপায়ণ। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন

 ﴿لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا﴾ 

‘নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ— তার জন্য, যে আল্লাহর প্রতি এবং আখিরাতের দিনের প্রতি আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।

atOptions = { 'key' : '60346ff101516f2c4392466ad4234331', 'format' : 'iframe', 'height' : 300, 'width' : 160, 'params' : {} };
’ (সুরা : আহযাব, আয়াত : ২১) 

রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন কোরআনের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। আয়েশা (রা.)-কে যখন নবীজির চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন তিনি উত্তর দিয়েছিলেন—

 “كَانَ خُلُقُهُ الْقُرْآنَ” 

‘তাঁর চরিত্রই ছিল কোরআন।” (সহিহ মুসলিম) 

অতএব, কোরআনের ব্যাখ্যা শুধু তাফসীরের বই নয়; বরং রাসুল (সা.)-এর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়, প্রতিটি ঘটনাই পবিত্র কোরআনের জীবন্ত ব্যাখ্যা। সিরাত ছাড়া কোরআনের প্রকৃত বুঝ কিছুতেই সম্ভব নয়।

https://www.revenuecpmgate.com/jwiigxt9di?key=e6b399d558992f12dcf68d25b5f7e584 

পবিত্র কোরআনে নামাজের নির্দেশ এসেছে, কিন্তু কিভাবে নামাজ পড়তে হবে, তা নবীজির সিরাত ছাড়া বোঝা যায় না। কোরআনে যাকাতের নির্দেশ এসেছে, কিন্তু কোন সম্পদে, কত পরিমাণে, কিভাবে তা আদায় করতে হবে— এর বাস্তব শিক্ষা নবীর জীবন থেকেই জানা যায়।

কোরআনে জিহাদ, ধৈর্য, ন্যায়, প্রতিবেশীর অধিকার, দাওয়াত—সব কিছু এসেছে, কিন্তু তার পূর্ণ রূপ কেবল সিরাতের আলোতেই স্পষ্ট হয়। তাই সিরাত হলো সেই আয়না, যেখানে কোরআনের প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট দেখা যায়। সাহাবিগণের উপলব্ধি সাহাবীরা কোরআন বুঝতেন নবীর জীবন দেখে।

 

তারা বলতেন— ‘আমরা যখন কোরআনের আয়াত নাজিল হতে দেখতাম, তখন রাসুল (সা.)-এর জীবনে তার বাস্তব রূপ দেখতে পেতাম।’ উদাহরণস্বরূপ— যখন ধৈর্যের আয়াত নাজিল হতো, আমরা দেখতাম নবীজিকে তায়েফের ময়দানে রক্তাক্ত অবস্থায়ও দোয়া করতে। যখন দানের আয়াত নাজিল হতো, আমরা দেখতাম নবীজি নিজের ঘরের খাদ্য পর্যন্ত বিতরণ করছেন। যখন ক্ষমার আয়াত নাজিল হতো, আমরা দেখতাম তিনি মক্কা বিজয়ের দিন শত্রুকেও ক্ষমা করছেন। 

আজ আমরা কোরআন হাতে রাখি, তাফসীর পড়ি, কিন্তু কোরআনের সত্যিকার স্বাদ অনুভব করতে পারি না— কারণ সিরাতকে অবহেলা করি। কোরআন হলো দিশারি বা নকশা, আর সিরাত হলো সেই নকশার বাস্তব রূপ। যদি সিরাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোরআনকে বুঝতে চাই, তবে তা হবে মানচিত্র দেখে ভ্রমণ শুরু করা; কিন্তু পথপ্রদর্শক ছাড়া অচল হয়ে পড়া। 

সিরাত হলো কোরআনের হৃদস্পন্দন, কোরআন বোঝার অনিবার্য সূত্র। রাসুল (সা.)-এর জীবন ছাড়া কোরআন শুধু লেখা, কিন্তু তাঁর জীবন তাকে দিয়েছে প্রাণ। তাই যে কোরআনকে ভালোবাসতে চায়, তার অবশ্যই সিরাত অধ্যয়ন করতে হবে; যে কোরআনকে জীবনদর্শন বানাতে চায়, তাকে অবশ্যই নবীর জীবনকে অনুসরণ করতে হবে।

আসুন, আমরা আবার ফিরে যাই রাসুল (সা.)-এর জীবনে। তাঁর দাওয়াত, তাঁর ধৈর্য, তাঁর সাহস, তাঁর ক্ষমা, তাঁর ইবাদত— এগুলো আমাদের সামনে কোরআনের জীবন্ত অর্থ উন্মোচন করে। তবেই আমরা কোরআনকে কেবল পড়া নয়, বরং বোঝা ও জীবনে ধারণ করতে পারব।

Post a Comment

Previous Post Next Post