"ইহুদি জাতির উত্থান ও পতনের ইতিহাস"
ইহুদি জাতির উত্থান ও পতন : ইতিহাসের দর্পণে এক বিস্ময়কর অভিযাত্রা
ইতিহাসের পাতায় ইহুদি জাতির পরিচয় শুধু ধর্মীয় পরিচয় নয়—বরং এক রাজনীতি, সংস্কৃতি, বিশ্বাস এবং এক ভাঙা-গড়া অধ্যায়ের দীর্ঘ আখ্যান। বনি ইসরাঈল নামেই যাদের শেকড়—তাদের উত্থান যেমন নবুয়তের আলোকে মহিমান্বিত, তেমনি পতনও হয়েছে একের পর এক অহংকার, অন্যায় আর ঈশ্বরের অবাধ্যতায়। এই জাতির ইতিহাস কেবল পঠনের বিষয় নয়, বরং তা বিশ্লেষণের এক অপার ক্ষেত্র। নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো সেই ইতিহাসের ধারা, যেখানে রয়েছে আসমানি নির্দেশ, মানবরচিত বিকৃতি এবং মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তির চিত্রপট।
১. নবুয়তের আলোয় জাতির জন্ম
ইবরাহিম (আ.) থেকে শুরু হওয়া এ জাতির যাত্রা শুরু হয় ঈমান, তাওহিদ এবং আখলাকের এক অনুপম ধারায়। তাঁর পুত্র ইসহাক (আ.) এবং নাতি ইয়াকুব (আ.), যিনি ইসরাঈল নামে খ্যাত, তাঁদের মাধ্যমেই গড়ে ওঠে বনি ইসরাঈল জাতির ভিত্তি। নবী ইউসুফ (আ.)-এর অভাবনীয় উত্থান এবং মিসরের রাজপ্রাসাদে তাঁর প্রতাপপূর্ণ অবস্থান ছিল এক আলোকময় অধ্যায়।
২. দাসত্বের গ্লানি থেকে নবজাগরণের সূর্যোদয়
মিসরের ফেরাউনি শাসনে দাসত্ব আর যুলুমের বেড়াজালে আবদ্ধ বনি ইসরাঈলকে মুক্তির পথ দেখান হজরত মুসা (আ.)। তাঁর হাতে অলৌকিক মু’জিজা, ফেরাউনের পতন এবং লোহিত সাগরের পথরোধ ভেঙে সামনে এগিয়ে যাওয়া—সবকিছুই ছিল এক ঈশ্বরিক কাব্য। এ সময়েই নাজিল হয় তাওরাত, যা ছিল তাঁদের জন্য জীবনবিধান। কিন্তু এই জাতি বারবার নিজেরাই নিজের বিধ্বংসী হয়ে ওঠে—অমান্যতা, গো-বাদনার প্রতি আসক্তি, নবীদের অস্বীকার, এমনকি হত্যা—তাদের হৃদয়ে জমতে থাকে অবাধ্যতার কালিমা।
৩. আধ্যাত্মিক রাজত্ব থেকে ধর্মচ্যুতির গহ্বরে পতন
দাউদ (আ.) ও সুলাইমান (আ.)—এই দুই নবীর যুগ ছিল বনি ইসরাঈলের গৌরবময় সময়। জ্ঞান, শৌর্য ও ন্যায়ের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয় এই সময়ে। সুলাইমান (আ.)-এর হুকুমে পশুপাখি এমনকি বাতাসও চলত। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর জাতি পড়ে বিভক্তির ফাঁদে। দুই রাজ্যে ভাগ হয়ে যায়—ইসরায়েল ও ইয়াহুদা। শিরক, দুর্নীতি ও নৈতিক অবক্ষয় এত গভীর হয় যে, আল্লাহ তাঁদের উপর একের পর এক বিপদ অবতীর্ণ করেন—নির্বাসন, দখল, ধ্বংস এবং জাতিগত বিভ্রান্তি।
৪. নির্বাসন, প্রত্যাবর্তন ও পুনরায় বিদ্রোহ
বাবেলীয়দের হাতে রাজ্য পতনের পর শুরু হয় দীর্ঘ নির্বাসনের সময়। তবু কুরুশ সম্রাটের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁদের আবার সুযোগ দেন ফেরার, মন্দির পুনর্নির্মাণের, ঈমান ফিরিয়ে আনার। কিন্তু সময়ের চাকা ঘুরে আবারও ইহুদি জাতি হারিয়ে ফেলে সেই অনুশোচনা। আল্লাহর কিতাবের সঙ্গে মনগড়া ফতোয়া ও বিকৃতি যুক্ত করে তাঁরা ধর্মকে করে তোলে এক রাজনৈতিক ও জাতিগত হাতিয়ার।
৫. পরাক্রম থেকে পদদলনে : ইতিহাসের নির্মম পুনরাবৃত্তি
গ্রিকদের হেলেনীয় দৃষ্টি, রোমানদের পৈশাচিক শাসন, খ্রিস্টানদের ঘৃণা—ইহুদি জাতি পৃথিবীজুড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তারা পরিচয় হারায়, নিজেদের পরিচিত করে শত্রুতা, ষড়যন্ত্র ও পার্থিব মোহের জাতি হিসেবে। ঈসা (আ.)-কে অস্বীকার এবং তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র এই জাতিকে আল্লাহর দৃষ্টিতে এতটাই গর্বিত করে তোলে যে, তাদের প্রতি রহমতের দরজা চিরতরে রুদ্ধ হয়ে যায়—যা কোরআনে বহু স্থানে বর্ণিত হয়েছে।
https://www.profitableratecpm.com/jwiigxt9di?key=e6b399d558992f12dcf68d25b5f7e584৬. ইসলামী শাসনে করুণা ও ন্যায়বিচার
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগ থেকে শুরু করে খোলাফায়ে রাশিদিন, উমাইয়া, আব্বাসীয় ও অটোমান শাসনে ইহুদি জাতি পায় এক তুলনামূলক নিরাপদ আশ্রয়। তাদের দেওয়া হয় বসবাস, শিক্ষা ও ব্যবসা করার অধিকার। এমনকি অনেক সময় তারা মুসলিম প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদেও অধিষ্ঠিত হয়। এটি ছিল ইসলামের সহনশীলতার বাস্তব উদাহরণ।
৭. আধুনিক ইসরায়েলের উত্থান : ন্যায়বিচার না, বরং নিষ্ঠুরতা
১৯৪৮ সালের সেই দিনটি শুধু ফিলিস্তিনিদের জন্য নয়, বরং মানবতার ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। ইহুদি জাতির এই রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে অন্যের ভূমি দখল করে, হাজার হাজার মানুষের রক্ত আর চোখের জলে। আজও তা চলছে—কখনো গাজা উপত্যকায়, কখনো পশ্চিম তীরে, আর বিশ্বশক্তির মদদে এক ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের রূপ নিচ্ছে।
৮. ইহুদি ইতিহাসের পাঠ : শিক্ষা কী?
ইহুদি জাতির ইতিহাস আমাদের সামনে এক নির্ভুল আয়না ধরে। একটি জাতি যতই নবীপ্রাপ্ত হোক, যতই আসমানি কিতাবধারী হোক—যদি তারা আল্লাহর বিধান থেকে বিচ্যুত হয়, অহংকারে গা ভাসায় এবং আখলাক ও আদর্শ বিসর্জন দেয়, তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে ধ্বংস, অপমান ও অপসারণ। কোরআন বারবার এই জাতির ইতিহাস তুলে ধরেছে মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করার জন্য।
হে আল্লাহ আমাদের সকল মুসলিম ভাইদের ইহুদিদের চক্রান্ত থেকে মুক্ত রাখুন আমিন
ReplyDeleteহযরত ইয়াকুব সালাতু ওয়াস সালামের অপর নাম ছিল ইসরাইল
ReplyDeletePost a Comment