নিশ্চয়ই জাহান্নাম ওৎ পেতে রয়েছে

জাহান্নামও আরবি শব্দ। এর অর্থ গভীর গর্ত। ইসলামি পরিভাষায়, মহান আল্লাহ আখিরাতে অবিশ্বাসী ও পাপীদের শাস্তির জন্য যে অগ্নিময় আবাস তৈরি করে রেখেছেন, তাকে জাহান্নাম বলা হয়। এটাকে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে ‘নার’ বলা হয়েছে।

মহান আল্লাহ আখিরাতে অবিশ্বাসী ও পাপীদের শাস্তির জন্য যে অগ্নিময় আবাস তৈরি করে রেখেছেন, তাকে জাহান্নাম বলা হয়। ছবি: সংগৃহীত



মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সুরা এটাকে ২১ নম্বর আয়াতে বলেন, নিশ্চয়ই জাহান্নাম ওৎ পেতে রয়েছে।

 
জাহান্নামিদের মৃত্যু হবে না। তারা আর্তনাদ করতে থাকবে। আল্লাহ বলেন, তবে যারা কুফরি করে তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি রয়েছে। তাদের মৃত্যুর আদেশ দেয়া হবে না। শাস্তিও হালকা করা হবে না, এভাবে আমি অকৃতজ্ঞদের শাস্তি দিয়ে থাকি। তারা সেখানে আর্তনাদ করে বলবে, হে আমাদের রব, আমাদের বের করুন, আমরা ভালো কাজ করব, আগে যা করেছি তা করব না।
 
আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাদের এত দীর্ঘ জীবন দিইনি? তখন কেউ সতর্ক হতে চাইলে সতর্ক হতে পারত। অতএব তোমরা শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করো, জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই। (সুরা ফাতির ৩৬-৩৭)
 
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, জাহান্নামিদের মাথায় উত্তপ্ত গরম পানি ঢালা হবে। তা পেট পৌঁছে সব নাড়িভুঁড়ি গলিয়ে দেবে। এরপর তা পায়ের দিক থেকে বের হয়ে পড়বে। (তিরমিজি ২৫৮৩)
 
জাহান্নামিদের চেহারাসহ পুরো শরীর আগুন দিয়ে দগ্ধ করা হবে। আল্লাহ বলেন, কিয়ামতের দিন আমি তাদের অন্ধ, মূক ও বধির করে মুখের ওপর ভর দেয়া অবস্থায় সমবেত করব। তাদের আবাস হবে জাহান্নাম, যখন তা নিভে যাবে তখন আগুনের শিখা বৃদ্ধি করব। (সুরা বনি ইসরাঈল ৯৭)
  m
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
 

وَ مَنۡ خَفَّتۡ مَوَازِیۡنُهٗ فَاُولٰٓئِكَ الَّذِیۡنَ خَسِرُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ فِیۡ جَهَنَّمَ خٰلِدُوۡنَ تَلۡفَحُ وُجُوۡهَهُمُ النَّارُ وَ هُمۡ فِیۡهَا كٰلِحُوۡنَ অর্থ: যাদের পাল্লা হালকা হবে তারা নিজেদের ক্ষতি করেছে। তারাই জাহান্নামে স্থায়ী হবে। আগুন তাদের মুখ দগ্ধ করবে আর তারা সেখানে বীভৎস চেহারায় থাকবে। (সুরা মুমিনুন ১০৩-১০৪)

 

জাহান্নামিদের চামড়া পুড়িয়ে ফেলা হবে। তা পুড়ে গেলে নতুন চামড়া হবে আর পুনরায় তা পুড়িয়ে ফেলা হবে। আল্লাহ বলেন, যারা আমার নিদর্শন অস্বীকার করে আমি তাদের আগুনে পোড়াব, যখন তাদের চামড়া দগ্ধ হবে তখন সেই স্থানে নতুন চামড়া সৃষ্টি করব যেন তারা শাস্তি ভোগ করে, আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৬)
 

অহংকারীদের অপদস্থ করে রক্ত-পুঁজ পান করানো হবে। জাহান্নামের বাওলাস নামের বন্দিশালায় নেয়া হবে। কঠিন আগুন তাদের গ্রাস করবে। জাহান্নামিদের দুর্গন্ধময় পুঁজ-রক্ত ইত্যাদি পান করানো হবে। (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৯২)

 


জাহান্নামে কাফিরদের শারীরিক গঠন অস্বাভাবিক বড় হবে। জাহান্নামে কাফিরদের উভয় কাঁধের দূরত্ব দ্রুতগামী ঘোড়ার তিন দিনের পথের সমান হবে। অন্য বর্ণনা মতে, কাফিরের একটি দাঁত উহুদ পাহাড়ের সমান হবে আর তার দেহের চামড়া তিন দিনের দূরত্ব পরিমাণ পুরু হবে। (বুখারি ৬৫৫১)
 

চিৎকার করে কান্না করায় একসময় জাহান্নামিদের অশ্রু শেষ হয়ে যাবে। জাহান্নামিদের জন্য কান্না পাঠানো হবে। এরপর তারা কাঁদতে থাকবে। এক পর্যায়ে তাদের চোখের পানি শেষ হয়ে যাবে। চামড়া চোখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকবে। ফলে তাদের মুখে বিশাল গর্ত সদৃশ তৈরি হবে। তাতে নৌযান পাঠানো হলে তা অনায়াসে চলতে পারবে। (ইবনে মাজাহ ৪৩২৪)

 

আমরা জানি, পৃথিবীর জীবন ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু আখিরাতের জীবন চিরস্থায়ী। আজকে জাহান্নামের শাস্তির ভীতিকর বিবরণ শুনে আমাদের হৃদয়ে হয়ত ভয়ের সঞ্চার হয়েছে। আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের এ ভীতি থেকে শিক্ষা নেয়ার তাওফিক দান করেন। আল্লাহর পথে পরিচালিত করেন। আমরা যেন এমন জীবন যাপন করি, যা আমাদের আখিরাতে জান্নাতের সুশীতল ছায়ায় নিয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে ক্ষমা করুন। জান্নাতের যোগ্য করে তুলুন, আমিন।

Post a Comment

Previous Post Next Post